‘জুলাইয়ের শক্তি’ এনসিপিকে জোটে পেতে চায় বিএনপি ও জামায়াত
নতুন করে আলোচনায় চলে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তি হিসাবে বিএনপি এবং জামায়াত উভয় দলই এনসিপিকে তাদের নির্বাচনি জোটে পেতে মরিয়া। এজন্য দুদলের পক্ষ থেকেই পর্দার আড়ালে এনসিপির সঙ্গে নানামুখী যোগাযোগ চলছে।
তবে এমন জোট গঠনের অভিপ্রায় নেই এনসিপির। নির্বাচনে যা-ই হোক, এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জোর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দলটি। বড় দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য হারানোর নজির বাংলাদেশে কম নেই। পতিত ফ্যাসিস্টের অন্যতম সহযোগী হাসানুল হক ইনু কিংবা রাশেদ খান মেননই সবচেয়ে বড় উদাহরণ। তাদের পরিণতি বরণ করতে রাজি নয় এনসিপি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা হাসানুল হক ইনু এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এক সময় স্বাধীন বামপন্থি দলের জনপ্রিয় নেতা হিসাবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এরপর তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে জোট গঠন করেন। যার ফলে তাদের স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে সরে আসতে হয়। গত ১৫ বছর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের গুণগানে মত্ত ছিলেন। যার ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দল দুটির আর কোনো আবেদনই নেই।
সেই ইতিহাস থেকেই শিক্ষা নিয়েছে এনসিপি। বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট করার বদলে যুগোপযোগী কর্মসূচির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ রাজনীতির শক্ত ভিত গড়ে তুলতে চাইছে দলটি।
গত শুক্রবার রাতে বিএনপির এক নেতার বাসায় এনসিপির প্রথম সারির কয়েকজন নেতার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। সেখানে এনসিপি নেতারা উল্লিখিত মতামত দেন।
তারা বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোট যাই পাওয়া যাক এনসিপি রাজনীতির মধ্য দিয়ে টিকে থাকতে চায়। কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করে তারা রাজনীতি থেকে হারিয়ে যেতে চায় না।
বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে আরও জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে এনসিপিকে ৮ থেকে ১০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এনসিপি নেতারা এতে রাজি হননি।
তারা সাফ জানিয়ে দেন আসন্ন নির্বাচনের আগে কোনো দলের সঙ্গে জোটে যাচ্ছে না এনসিপি। এমনকি জামায়াত বা তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক জোটও নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতা যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যখন কোনো ছোট দল অন্য কোনো বড় রাজনৈতিক দলে যোগ দেয় তখন তাদের মতাদর্শ হারিয়ে যায়।’
এরপরই ইনু-মেননের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম দোসর ইনু-মেননের দলগুলো এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে জনগণের কাছে তারা আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ এবং গৃহপালিত দল হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। এনসিপি সেই একই ভুল পথে পা বাড়াবে না।’
সূত্র জানায়, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী উভয় দলই জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তি হিসাবে এনসিপিকে জোটে পেতে মরিয়া। দুদলের পক্ষ থেকেই এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় শুধু ক্ষমতার জন্য অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোটে না গিয়ে বরং নিজেদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখার পক্ষে এনসিপি।

